লগ্ন বা রাশির গুরুত্ব
লগ্ন বা রাশি হল আমাদের জীবন চক্রের মূল ভিত্তি।লগ্ন মানে শরীর,ব্যক্তিত্ব এবং রাশি মানে মন।শরীর এবং মনের উপর ভিত্তি করেই চলে আমাদের জীবন চক্র।শরীর এবং মন ভাল হলে আমাদের প্রত্যেকটি কর্ম,আমাদের ব্যবহার,আচার আচরণ সবকিছুই ভালো হয়।আর শরীর এবং মন ভালো না হলে কোনকিছুই ভালো হয় না।
লগ্ন বা রাশি স্থানে অবস্থান রত গ্রহের প্রভাব
লগ্ন বা রাশি,তাদের অধিপতি ও কারক সূর্য বা চন্দ্রের শুভাশুভ অবস্থান ও বলাবলের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয় আমাদের ব্যক্তিত্ব ও মানুষিকতা। এর থেকে বেশী প্রভাবিত হয় লগ্ন বা রাশিতে অবস্থান রত গ্রহের প্রভাব দ্বারা।যদি কোন সৌম্য বা শান্ত প্রকৃতির গ্রহ লগ্ন বা রাশিতে অবস্থান করে,তাহলে ব্যক্তি শান্ত প্রকৃতির হয়।আর যদি কোন ক্রুর বা নির্দয় প্রকৃতির গ্রহ লগ্ন বা রাশিতে অবস্থান করে তাহলে ব্যক্তির স্বভাবের মধ্যে নির্দয়তা বা নিষ্ঠুরতা দেখতে পাওয়া যায়।মঙ্গল গ্রহ একটি অগ্নি তত্ত্ব গ্রহ।মঙ্গলকে গ্রহদের সেনাপতিও বলা হয়।আর কর্মশক্তি সম্পন্ন না হলে সেনা পরিচালনা সম্ভব নয় ।
লগ্ন বা রাশি স্থানে মঙ্গলের প্রভাব
লগ্ন বা রাশি স্থানে অবস্থান রত মঙ্গলের জাতক-জাতিকারা কাজে-কর্মে দ্রুত পদক্ষেপে বিশ্বাসী হন।ধীর-স্থিরভাবে কাজকর্মে বিশ্বাসী নন তারা।এককথায় সকালের কাজ দুপুরে আর দুপুরের কাজ বিকালে করতে চান না তারা।সকালের কাজ সকালেই শেষ করা মঙ্গলের প্রভাব যুক্ত জাতক-জাতিকার বৈশিষ্ট্যের মধ্যে বিদ্যমান থাকে।আর এমন বৈশিষ্ট্যযুক্ত জাতক-জাতিকার ক্ষেত্রে তাদের কর্ম ক্ষমতা বাড়িয়ে তাদের জীবনে সাফল্যও আসে অধিক মাত্রায় ।
কালপুরুষের কুণ্ডুলিতে মঙ্গলের অবস্থান
কালপুরুষের কুণ্ডুলীর হিসাব অনুযায়ী মঙ্গল প্রথম ঘর এবং অষ্টম ঘরের অধিপতি।প্রথম ঘর মানে আমাদের শরীর,ব্যক্তিত্ব,মান-সম্মান এবং অষ্টম ঘর মানে নেগেটিভ হিসাবে আমাদের দুঃখ কষ্ট,যন্ত্রণা এবং পজেটিভ হিসাবে গুপ্তধন, গুপ্তবিদ্যাও মত বিষয়াদি প্রদান করার মালিক মঙ্গল দেবতা।
শুভ ও অশুভ মঙ্গলের প্রভাব
যদি কুণ্ডুলীতে মঙ্গল শুভ প্রভাব যুক্ত হলে মঙ্গলের প্রভাবযুক্ত জাতক-জাতিকারা কর্ম প্রধান,ন্যায়-নীতিশীল,পরোপকারী ব্যক্তিত্বের অধিকারী হন।আর যদি মঙ্গল পাপ প্রভাব যুক্ত হন,তাহলে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার সাথে ব্যক্তিত্ব,মান-সম্মান ক্ষতিগ্রস্ত হয়।জীবনে দুঃখ,কষ্ট,যন্ত্রণা পেতে হয়।শত্রু গ্রহের সাথে জ্যোতি বা দৃষ্টি সম্পর্কে মঙ্গলের বৈশিষ্ট্যের হানি ঘটে। শত্রু রাশি বা নীচ রাশিতে অবস্থান করলেও মঙ্গল সুপ্রভাবের পরিবর্তে কুপ্রভাব প্রদান করেন আমাদের জীবনে ।
মঙ্গলের সাথে শনি রাহুর মত গ্রহের জ্যোতি ও ফলাফল
মঙ্গলের সাথে শনি, রাহুর মত মঙ্গলের বৈশিষ্ট্যের সাথে মিল নেই গ্রহের সংযুক্ততায় মঙ্গলের নিজস্ব বৈশিষ্ট্যের হানি ঘটে।যেমন-লগ্ন বা রাশিতে অবস্থান রত মঙ্গলের প্রভাবযুক্ত জাতক-জাতিকারা তাদের উপর অন্যের নিয়ন্ত্রণ মেনে নিতে পারেন না।যদি তাদের ব্যক্তিত্বের সাথে সেই ব্যক্তির ব্যক্তিত্বের মিল না থাকে ।
যদি জোর করে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা হয়,তাহলে মঙ্গলের অগ্নিতত্ত্ব প্রভাবের কারণে সেই নিয়ন্ত্রণ সহ্য করতে না পেরে কোন একটা সময় ধৈর্য্যচুত্য হয়ে যান।ফলস্বরুপ রাগের বহিঃপ্রকাশ ঘটে।অনেক সময় সেই রাগের দ্বারা অনেক অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটতে দেখা যায়।ধৈর্য্য হারানোর কারণে অন্যের ক্ষতির সাথে মঙ্গলের প্রভাব যুক্ত জাতক-জাতিকারা নিজেরও ক্ষতি করে ফেলেন ।
শত্রু রাশিতে মঙ্গলের অবস্থান ফল
শত্রু রাশিতে অবস্থান করা কথার অর্থ হল কোন ব্যক্তি যে জায়গায় কাজ করে, সেই জায়গার মালিকের সাথে সেই ব্যক্তির ব্যক্তিত্বের মিল না থাকা।আর নীচ রাশির অর্থ হল ব্যক্তি যে স্থানে কাজ করে,সেই স্থানের ব্যক্তির বৈশিষ্ট্যের সাথে মিল না থাকা।তাই অশুভ বা পাপ প্রভাব যুক্ত মঙ্গল লগ্ন বা রাশিতে অবস্থান করা জাতক-জাতিকাদের জীবনে যতই সমস্যা আসুক,কখনও ধৈর্য্য হারাতে নেই।ধৈর্য্য না হারিয়ে পরিস্থিতি যেমন পর্যায়ের হোক নিজেকে শান্ত রাখতে হয়।ধীর স্থিরভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হয়, যাতে পরিস্থিতি নিজের অনুকূলে আনা যায় ।
মঙ্গলের শুভফল পাওয়ার উপায়
লগ্ন বা রাশি স্থানে পাপ প্রভাব যুক্ত মঙ্গলের জাতক-জাতিকাদের মঙ্গলের শুভ প্রভাবকে ধরে রাখার যথেষ্ট কিছু উপায় রয়েছে।যেগুলি অবলম্বন করলে মঙ্গলের দুষ্প্রভাবকে কাটিয়ে সুপ্রভাব লাভ করা যায়।সেই উপায়গুলির মধ্যে প্রথমেই যে বিষয় নিয়ে আলোচনা করা যায়, সেটা হল-মঙ্গল যেহেতু আমাদের দেহের রক্তের কারক।তাই যে সব খাবার খেলে রক্ত গরম হয় বা ব্লাড প্রেসার বেড়ে যায়,সেই সব খাবারের পরিমাণ কমানো বা ত্যাগ করা।বিশেষত মঙ্গলবারকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া ।
সেই সাথে সর্বদা নিয়ম শৃঙ্খলা এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার মধ্যে দিয়ে চলা। পাপ প্রভাব যুক্ত মঙ্গল অধিক খারাপ ফল প্রদান করলে আমিষ জাতীয় এবং নেশা জাতীয় খাদ্য ত্যাগ করা লাভদায়ক।মা দুর্গা এবং বজরঙ্গবলীর আরাধনা করা এবং মঙ্গলের বীজমন্ত্র সহ অন্যান্য মন্ত্র পাঠ দ্বারা শুভফল পাওয়া যায় ।
উপসংহার
উপরিউক্ত বিষয়গুলি মেনে চললে অশুভ প্রভাবের কারণে পীড়িত মঙ্গলের কুপ্রভাব থেকে রক্ষা পাওয়া যায় এবং জীবন সংগ্রামে জয়ী হয়ে সাফল্য অর্জন করা যায় ।
0 Comments