জ্যোতিষশাস্ত্রে সপ্তম ঘর বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এই ঘর থেকেই জীবনসঙ্গী, দাম্পত্য জীবন, ব্যবসায়িক অংশীদারিত্ব এবং আমাদের নিত্যদিনের মিথস্ক্রিয়ার বিচার করা হয়। শুধু জীবনসঙ্গীই নয়, বরং যেকোনো ধরনের পারস্পরিক সম্পর্ক, ব্যবসায়িক চুক্তি ও সামাজিক আদান-প্রদানের ক্ষেত্রেও সপ্তম ঘরের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। এই ঘর, এর অধিপতি ও কারক গ্রহের শক্তি এবং অবস্থানের ওপর নির্ভর করে জাতকের জীবনে সুখ-শান্তি ও সাফল্য আসবে, নাকি সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে।
সপ্তম ঘরে গুরু: শুভ ও অশুভ ফলাফল
গুরু হল ন্যায়, ধর্ম, শিক্ষা ও জ্ঞানের প্রতীক। এটি একটি শুভ গ্রহ হিসেবে বিবেচিত হয়, যা সাধারণত কল্যাণকর ফল প্রদান করে। যখন শুভ অবস্থায় থাকে বা শুভ ঘরের অধিপতি হয়ে সপ্তম ঘরে অবস্থান করে, তখন এটি দাম্পত্য জীবন, ব্যবসায়িক চুক্তি ও সামাজিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। জাতক-জাতিকার বিবাহিত জীবন সুখী হয়, সঙ্গীর সঙ্গে বোঝাপড়া ভালো হয় এবং ব্যবসায়ও লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
তবে, যদি গুরু অশুভ ঘরের অধিপতি হয়ে সপ্তম ঘরে অবস্থান করে, নীচ রাশিতে থাকে বা শত্রুগ্রহের প্রভাবে পড়ে, তাহলে এই ঘরের বিষয়ে সমস্যা দেখা দিতে পারে। দাম্পত্য জীবনে মতানৈক্য, ভুল বোঝাবুঝি, ব্যবসায় লোকসান বা অংশীদারের সঙ্গে বিরোধের আশঙ্কা থাকে।
গুরুর আদর্শ অনুসরণ: সমস্যা সমাধানের পথ
গুরু নিজে অশুভ ফল প্রদান করেন না; বরং জাতক-জাতিকার আচরণ ও কর্মপদ্ধতির ওপর নির্ভর করে তার প্রভাব শুভ বা অশুভ হয়ে ওঠে। ধর্ম, নীতি, শৃঙ্খলা এবং ন্যায়পরায়ণতা মেনে চললে গুরুর অবস্থান যেমনই হোক না কেন, শুভফল অর্জন করা সম্ভব।
সপ্তম ঘরে গুরু অবস্থান করলে, জাতক-জাতিকাকে দাম্পত্য জীবন ও ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে সততা, বিশ্বাসযোগ্যতা ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হয়। প্রতিদিনের কাজের মধ্যে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং শৃঙ্খলা আনার চেষ্টা করলে নেতিবাচক প্রভাব কমে যায়।
এছাড়া, সপ্তম ঘরে অবস্থানকারী গুরুর সপ্তম দৃষ্টি পড়ে লগ্নে, যা জাতকের সার্বিক ব্যক্তিত্ব ও জীবনে প্রভাব ফেলে। তাই যদি কেউ গুরুর আদর্শ মেনে চলে, তাহলে ব্যক্তি জীবনের পাশাপাশি দাম্পত্য ও ব্যবসায়িক জীবনেও ভারসাম্য বজায় রাখতে পারে এবং সাফল্যের পথে এগিয়ে যেতে পারে।
উপসংহার
সপ্তম ঘরে গুরু অবস্থান করলে তা জাতকের জীবনকে ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করতে পারে, যদি তিনি গুরুর আদর্শ অনুসরণ করেন। শুভ অবস্থানে থাকলে এটি দাম্পত্য সুখ, সফল ব্যবসা এবং সমাজে সুসম্পর্ক গঠনের সুযোগ তৈরি করে। আর অশুভ অবস্থানে থাকলেও গুরুর আদর্শে চললে সমস্যা অনেকটাই এড়ানো যায়। ন্যায়-নীতি, শৃঙ্খলা ও সততা বজায় রাখাই এই অবস্থানের শুভফল পাওয়ার মূল চাবিকাঠি।
No comments:
Post a Comment